মামলার সংখ্যা ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে এগিয়ে শেখ হাসিনা

দুর্নীতির মামলা ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে এখন নানা বিতর্ক চলছে। কাউন্সিলে তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, তারেক রহমানকে এই দায়িত্বে নিয়ে আসার মাধ্যমে বিএনপি দুর্নীতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাউন্সিলের পরদিনই তারেক রহমানের নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে ঘোষণা করেছেন দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারীদের ছাড়া হবে না। এর জবাবে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার বলেছেন, সরকার তারেক রহমানের নেতৃত্বকে ভয় পেয়ে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। দেশের মানুষ জানে কে দুর্নীতিবাজ, কে ভালো, কে মন্দ। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলামও আওয়ামী লীগের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। বিএনপি নেতাদের বক্তব্য, দুর্নীতিতে আওয়ামী লীগ নেত্রী থেকে শুরু করে কেউ পিছিয়ে নেই।

এ অবস্থায় অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জরুরি অবস্থার সরকারের সময় বিএনপির নবনির্বাচিত সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার সংখ্যা ২টি বেশি ছিল। জরুরি অবস্থার সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল ১৩টি। তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা ছিল ১৫টি।

জরুরি অবস্থার সরকার দুই বছরে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো মামলায় চার্জশিট দাখিল করতে না পারলেও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৩টি মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছিল। চেকের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণের প্রমাণসহ চার্জশিট দাখিলের পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি মামলার বিচার কার্যক্রমও শুরু হয়েছিল আদালতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মামলায় জামিন না নিয়ে তখন সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাহী আদেশে বিদেশে গিয়েছিলেন। অপরদিকে তারেক রহমান সব মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিত্সার জন্য বিদেশে যান। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিগ-২৯ ক্রয়ে ৭৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির মামলার বিচার কার্যক্রম নিম্ন আদালতে চলতে পারে বলে সুপ্রিমকোর্টও নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই মামলার বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোয়াশমেন্ট আবেদন খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিমকোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির নবনির্বাচিত সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলার তুলনামূলক চিত্র অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ নানা তথ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৫টি মামলার মধ্যে একটিতে খুনের সহযোগিতা করা এবং বাকি ১৪টিতে মোট চৌদ্দ হাজার কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছিল। প্রায় ২০ কোটি টাকার ঘুষ গ্রহণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল জরুরি সরকারের সময় ব্যবসায়ীদের দায়ের করা কয়েকটি মামলায়। টাকার অংকে সর্বাধিক আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল নাইকো দুর্নীতি মামলায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ছিল মিগ-২৯ ক্রয় সংক্রান্ত মামলায়। বিচারাধীন এসব মামলায় তখন জামিন ছাড়া নির্বাহী আদেশে মুক্তি নিয়ে আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেনসহ দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ান তিনি। শেখ হাসিনাকে মুুক্তি দেয়ার আগে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় বিশেষ জজ আদালতে ঘটেছিল অনেক নাটকীয় ঘটনা। ১১ জুন তার মুক্তির আগের দিন বিকাল ৫টার পর খাস কামরায় বসে চারটি মামলায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতির আদেশ দিয়েছিলেন বিচারক। এমনকি এ সময় সরকারি আইনজীবীরা ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতির পক্ষে ওকালতি করেছিলেন।

অপরদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলা ছাড়া অন্য কোনো মামলায় আদালতে চার্জশিটও দাখিল হয়নি। একটি ছাড়া বাকি কোনো মামলায় এখন পর্যন্ত তদন্ত শেষ করতে পারেনি সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য মরিয়া ছিল জরুরি অবস্থার সরকার। তারপরও দীর্ঘ দুই বছরেও একটি ছাড়া অন্য কোনো মামলায় চার্জশিট দেয়া সম্ভব হয়নি। একমাত্র বসুন্ধরা গ্রুপের সাব্বির হত্যা মামলা ধামাচাপা দিতে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছিল আদালতে। এ মামলার এজাহারেও তার নাম ছিল না। পরবর্তী সময়ে তার নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২৮ সাক্ষীর মধ্যে ১ জন মাত্র সাক্ষীর জবানবন্দির ভিত্তিতে নামটি চার্জশিটের অন্তর্ভুক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। এই সাক্ষীর ওপর তখন তারেক রহমানের নাম বলানোর জন্য নির্যাতন চালানো হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে মামলাটির কার্যক্রমও নিম্ন আদালতে স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তারেক রহমানকে এ মামলায় আপিল বিভাগ জামিন মঞ্জুর করেন। এছাড়া হাইকোর্ট বিভাগ তারেক রহমানের স্বাস্থ্য রিপোর্ট তলব করে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিদেশে উন্নত চিকিত্সার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তখন বিচারাধীন ১৫টি মামলার মধ্যে মাত্র ৩টি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে তার জামিন ছিল। বাকি কোনো মামলায় তখনও জামিন হয়নি। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে ক্ষমতায় থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাজার কোটি টাকার বেশি রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়, চাঁদাবাজি। এর মধ্যে মিগ-২৯ ক্রয়ে দুর্নীতি মামলাটি থেকে অব্যাহতি চেয়ে তিনি হাইকোর্ট বিভাগে কোয়াশমেন্ট আবেদন করেছিলেন। এ আবেদন হাইকোর্ট বিভাগে শুনানি শেষে খারিজ করে দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেন। আপিল আবেদনও খারিজ করে দেন সুপ্রিমকোর্ট। উচ্চ আদালতের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে মামলাটি তার বিরুদ্ধে চলতে পারে। উচ্চ আদালতে শেখ হাসিনার আবেদন খারিজ হওয়ার পর মামলাটি বিশেষ জজ আদালতে বিচারের জন্য নির্ধারণ করা হয় তখন। এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৭৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল দুদক। আজম জে চৌধুরীর দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলাটিতেও চার্জশিট দাখিলের পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে চার্জ গঠন করা হয়েছিল। এ মামলায় ৩ কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। প্রমাণসহ আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। আদালত চার্জ গঠনের শুনানি শেষে চার্জশিট গ্রহণ করে এবং শেখ হাসিনা, শেখ সেলিম ও প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। মামলাটির বিচার চলে বিশেষ জজ আদালতে। সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। এ পর্যায়ে জরুরি অবস্থার সরকার চলে যাওয়ার পর বাদী আজম জে চৌধুরী মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। জরুরি অবস্থার সরকারের সময় দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৩ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। এ মামলায়ও চার্জশিট দাখিল করে দুদক। চার্জশিট দাখিলের পর শুরু হয় বিচার কার্যক্রম। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য দুদকে সুপারিশ পাঠিয়েছে সরকার। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দাখিল করে। আওয়ামী লীগ নেতা ব্যবসায়ী নূর আলীর দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলায় ৫ কোটি টাকাসহ কয়েকটি চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন নূর আলী। ওয়েস্টমন্ট গ্রুপের কাজী তাজুল ইসলাম ফারুক বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জরুরি অবস্থার সরকারের সময় ৩ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।

ফ্রিগেট কেনায় দুর্নীতি সংক্রান্ত তেজগাঁও থানার ৩৪(৮)২০০২নং মামলা ও মেঘনা ঘাট বিদ্যুত্ কেন্দ্র দুর্নীতি সংক্রান্ত রমনা থানার ৫৪ (১২)২০০১ নং মামলা, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত তেজগাঁও থানার ৯৫(৩)২০০২নং মামলা, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত তেজগাঁও থানার ৯৬(৩)২০০২নং মামলা, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার প্রকল্পে দুর্নীতি সংক্রান্ত তেজগাঁও থানার ৯৭(৩)২০০২নং মামলা, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাত্ সংক্রান্ত রমনা থানার ৬(৭)২০০৪ নং মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য দুদকের কাছে সুপারিশ করেছে সরকার। বিষয়টি দুদকের বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। বিএনপি সরকারের শেষ দিনে ২৮ অক্টোবর পল্টনে প্রকাশ্যে লগি-বৈঠা দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ৬ নেতাকর্মী হত্যার সরাসরি ইন্ধনদাতা হিসেবে এ মামলা হয়েছিল। কারণ লগি-বৈঠা নিয়ে মাঠে নামার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে এ মামলায় শেখ হাসিনার নামে চার্জশিটও হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর মামলাটি প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়া হয়। সম্প্রতি পুলিশ সরকারি নির্দেশে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়।

অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামও বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির হত্যা মামলা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগে তত্কালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের সহযোগী হিসেবে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তারেক রহমানের মামলাগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উল্লিখিত মামলাসহ তার বিরুদ্ধে মোট ১৩টি মামলা দায়ের করে জরুরি অবস্থার সরকার। এর মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন ২টি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১টি ও জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ১টি মামলা দায়ের করে। বাকি মামলাগুলোতে ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলায় তারেক রহমানকেও বিভিন্ন পর্যায়ে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দৈনিক দিনকাল কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল না করার অভিযোগে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির দায়ের করা মামলাটি এরই মধ্যে হাইকোর্ট বাতিল করে দিয়েছে। বর্তমান সরকার জিয়া অরফানেজ মামলায় তারেক রহমানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে চার্জশিট দিয়েছে। অতিসম্প্রতি সরকার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে তারেক রহমানের নাম জুড়ে দিয়ে ২০ কোটি টাকা সিঙ্গাপুরে পাচারের অভিযোগ এনে মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করেছে। অপর সব মামলায় তারেক রহমানকে জামিন মঞ্জুরের পাশাপাশি মামলাগুলো স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সেনা সমর্থিত জরুরি সরকারের সময় দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০০৭ সালের মার্চে দ্রুত বিচার আইনে কাফরুল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা প্রথম মামলা। ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেফতারের পরে এই মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ৮ মার্চ ব্যবসায়ী আমিন আহমেদ ভুইয়াকে দিয়ে জরুরি সরকার ১ কোটি টাকা চাঁদাবাজির একটি মামলা দায়ের করে। আমিন কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ ভুইয়ার মামলায় তারেক রহমানকে প্রথম রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। জরুরি সরকার বিদায় নেয়ার পর বাদী নিজেই মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। সংবাদ সম্মেলন বাদী নিজেই মামলাটি কীভাবে জোর করে দায়ের করানো হয়েছিল তার বিবরণ দেন। সম্প্রতি সরকারও এ মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করার জন্য করা হয়েছে উল্লেখ করে এটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়।

এছাড়া তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে কাফরুল থানায় দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা রয়েছে। তারেক রহমানের স্ত্রী তার মায়ের কাছ থেকে এই টাকা নিয়ে এফডিআর করেছিলেন। কিন্তু এর যথাযথ ট্যাক্স দেয়া হয়নি অভিযোগ এনে এটাকে অবৈধ সম্পদ উল্লেখ করে মামলা করা হয়। আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের একই অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দায়ের করা কর ফাঁকির মামলাও রয়েছে। ২০০৭ সালের ২ এপ্রিল ধানমন্ডি থানায় দুদক আইনে মীর জহিরুল ইসলামের দায়ের করা দুর্নীতির মামলা, জাজ ডিস্টিলারির বিরোধকে কেন্দ্র করে জোর করে এর শেয়ার নেয়ার অভিযোগে শরিক হারুন ফেরদৌসের মামলা, চাঁদাবাজির অভিযোগে কাফরুল থানায় দায়ের করা আফতাব উদ্দিনের মামলা, চাঁদাবাজির অভিযোগে খায়রুল বাশারের মামলা। এর বাইরে আছে ব্যবসায়ী সৈয়দ সাহেদ সোহেলের গুলশান থানায় দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলা। গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের স্বীকারোক্তির উল্লেখ করে এ মামলায় তারেক রহমানকে আসামি করা হয়। অভিযোগ ছিল তারেক রহমানের ইঙ্গিত ও নির্দেশে রেজা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের কাছ থেকে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ৫ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেন। ব্যবসায়ী খান মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিনের গুলশান থানায় দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলা।

সব মামলায় আইনগত প্রক্রিয়ায় জামিনে মুক্ত রয়েছেন তারেক রহমান। হাইকোর্ট বিভাগে জামিনের পর সরকার আপিল করে। আপিল বিভাগও হাইকোর্ট বিভাগের জামিন বহাল রাখেন। একটি মামলায় তখন হাইকোর্ট বিভাগ তারেক রহমানকে জামিন দেননি। সেই মামলায়ও আপিল বিভাগ তারেক রহমানকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন।

বর্তমান সরকার জরুরি সরকারের দায়ের করা রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অনুরূপ সরকারি দলের নেতাদের মামলাগুলো তুলে নেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু তারেক রহমানের একটি ছাড়া অন্য কোনো মামলা সরকার প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং তার নামে নতুন নতুন মামলা দায়ের করে। অন্যদিকে রাজনৈতিক মামলা বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর ১১টি মামলা এরই মধ্যে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। পল্টনের খুনের মামলাটি সরকারি নির্দেশে সরাসরি পুলিশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আরও তিনটি মামলা বাদী প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

About the author

MD AL AMIN

A self-proclaimed freethinker, MD AL AMIN has never shied away from questioning conventional wisdom and challenging the status quo. His ability to think critically and independently has made him a respected figure in various online communities, where he engages in thought-provoking discussions and encourages others to do the same.

View all posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *