বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় মৌলবাদ আর সংখ্যালঘু নির্যাতন, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার প্রবণতা বেশ বেড়ে গেছে। এসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন ইসলামিক গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোচনা চলছে। আমাদের দেশে ধর্মীয় সহনশীলতার ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও, কিছু মৌলবাদী গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব আদর্শ আর প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে উগ্রতা ও সহিংসতার পথ বেছে নিচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম এবং আরো কিছু মৌলবাদী সংগঠন অনেক সময় সরাসরি না হলেও, পরোক্ষভাবে এসব ঘটনার পেছনে উস্কানি বা ইন্ধন দিয়ে থাকে। তারা প্রায়ই সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে অথবা সরাসরি মিথ্যা তথ্য প্রচার করে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে উসকে দিয়ে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করে। এরই মধ্যে পূজামণ্ডপে হামলা, মন্দির ভাঙচুর বা হিন্দুদের বাড়িঘরে আক্রমণ করা এগুলোর উদাহরণ।
এ ধরনের সহিংসতায় যারা আক্রান্ত হয়, তারা দেশের নাগরিক হয়েও যেন এক প্রকার বঞ্চনার শিকার। অনেক সময় এসব হামলার পেছনে স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এসব গোষ্ঠী চায় সংখ্যালঘুদের ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করে রাখতে, যেন তারা তাদের কণ্ঠস্বরে প্রতিবাদ করতে না পারে বা তাদের সামাজিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রশাসনও মাঝে মাঝে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেয়, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাধা, ধর্মীয় অনুভূতির উস্কানি বা আইনগত দুর্বলতার কারণে কার্যকর প্রতিকার মেলে না। জনগণের অনেকেই এ ধরনের মৌলবাদী কাজের বিরুদ্ধে থাকলেও সামগ্রিকভাবে ব্যবস্থা নিতে কৌশলগত সমস্যা দেখা দেয়।
আমার মতে, এ ধরনের সমস্যা দূর করতে হলে প্রথমত ধর্মীয় শিক্ষার নামে উগ্রতা শেখানো বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাব্যবস্থায় এমনভাবে ধর্মীয় সহনশীলতা আর পারস্পরিক সম্মানের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া প্রশাসনকে শক্তভাবে এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে, যাতে কোনো পক্ষপাত ছাড়া যেকোনো ধর্মীয় সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়।